নব বর ও বধূকে কেন সাত পাকে ঘোরানো হয় ?
নব বর ও বধূকে কেন, সাত পাকে ঘোরানো হয় ?
পৌরাণিক মতে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। বাঙালির কাছে বিয়ে মানে খুবই আনন্দের একটি মুহূর্ত। ছোট বড়ো সবাই মাইল আনন্দে মেতে ওঠে গায়ে হলুদ এর দিন থেকে। আর এই দিন থেকেই শুরু হয় বিয়ের সমস্ত নিয়ম পালন। কত সব যে নিয়ম রয়েছে পাটিপত্র, পানখিল, দধি মঙ্গল, গায়ে হলুদ, শঙ্খ কঙ্কন, সাত পাকে ঘোরা, শুভদৃষ্টি, মালা বদল, হস্তবন্ধন, খই পোড়ানো, সম্প্রদান, অঞ্জলি, সিন্দূর দান। এই সমস্ত নিয়ম-কানুন গুলি শুধুমাত্র ধর্মের কারনে নয়, এর পিছনে রয়েছে আরো অনেক কারণ। প্রজাপতি ঋষির কৃপায় ও গুরুজনদের আশীর্বাদ নিয়ে শুরু হয় এক নতুন জীবন। বিবাহ মানে শুধু একটি নতুন জীবন শুরু হওয়া নয় দুটি মনের মিলন ও দুটি পরিবারের মিলন হওয়ার নামই বিবাহ। যুগ যুগ ধরে বলা হয়ে আসছে বিবাহের সাত পাক নাকি ব্যক্তিকে সাত জন্মের বন্ধনে বেঁধে ফেলে। আর এর জন্য অগ্নি দেবতা কে বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। সাতপাকে ঘোরা মানে শুধু যজ্ঞের আগুনের চারপাশে ঘোরা নয়। এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিতে হয় একে অপরকে। শাস্ত্র মতে এগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থ রয়েছে। সাত পাকে ঘোরার সাতটি ভিন্ন প্রতিশ্রুতি রয়েছে এগুলি নিম্নরুপ :
প্রথম পাক
পাত্রকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : তুমি আমার খাদ্যের দায়িত্ব নাও, আর আমি তোমাকে ও আমাদের সন্তানদের সুখ স্বাচ্ছন্দে রাখার দায়িত্ব স্বীকার করছি।
নব বধূকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : আমি গৃহকর্মীর যাবতীয় বিষয়ের জন্য দায়িত্বভার নিলাম ও আর্থিক বিষয় ঠিক রাখার দায়িত্ব ভারও আমার।
অন্তর্নিহিত অর্থ : নব দম্পতি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে তারা একে অপরের খাদ্য ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দায়িত্ব নেবে তারা দুজনে একসঙ্গে পরিবারের ভালো-মন্দ দেখাশোনা করবে।
Image Credit : Pexles
দ্বিতীয় পাক
পাত্রকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : আমরা একসঙ্গে সারাটা জীবন আমাদের বাড়ির ও সন্তানকে রক্ষা করবো।
নব বধূকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : আমি সারা জীবন তোমার পাশে থাকবো। তোমাকে শক্তি ও সাহস যোগাব। সারা জীবন সুখে রাখব। আর তুমি আমাকে আন্তরিকভাবে ভালবাসবে।
তৃতীয় পাক
পাত্রকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : আমরা যেন দিন দিন সমৃদ্ধশালী হতে পারি। আমাদের সন্তানরা দীর্ঘায়ু হোক। তাদের ভবিষ্যৎ যেমন আমরা উজ্জ্বল করতে পারে।
নব বধূকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : সারা জীবন আমি তোমাকে প্রানপনে ভালবেসে যাব. আমার সতীত্ব রক্ষা করব আমি. আমার জন্য তুমি সব কিছু। বাকি পুরুষ আমার কাছে গৌণ।
অন্তর্নিহিত অর্থ : বর ও বধু অর্থাৎ নব দম্পতি এক সঙ্গে কথা দেয় তারা একসঙ্গে আধ্যাত্বিক কর্তব্য সম্পন্ন করবে। সারা জীবন এভাবে একে অপরকে ভালোবেসে যাবে আর সতীত্ব রক্ষা করবে।
চতুর্থ পাক
পাত্রকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : তুমি আমাকে সম্পূর্ণ করবে ও আমার পবিত্রতাকে তুমি রক্ষা করবে। আমরা দুজনে মিলে মহৎ ও অনুগত সন্তানের জন্ম দেব।
অন্তর্নিহিত অর্থ : বর ও বধূ অর্থাৎ নব দম্পতি সারা জীবন একে অপরকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার অপবিত্রতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় বা প্রতিজ্ঞা করে।
পঞ্চম পাক
পাত্রকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : তুমি আমার প্রিয় বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী। ভগবানের আশীর্বাদ সর্বদা তোমার সঙ্গে থাকুক।
নব বধূকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : আমি সারা জীবন তোমার সঙ্গে থাকব। আর এভাবেই আমাদের ভালো-মন্দ ভাগ করে নেব।
অন্তর্নিহিত অর্থ : নব দম্পতি অর্থাৎ বরবধূ সারা জীবন একসঙ্গে থাকার ও সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া প্রতিশ্রুতি দেয়।
ষষ্ঠ পাক
পাত্রকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : তুমি আমার সঙ্গে শপথ নিয়েছো। এবার বলো চিরকাল তুমি আমাকে এভাবেই ভালোবাসবে তো এভাবেই আমার সঙ্গে থাকবে তো।
নব বধূকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : আমি সারা জীবন তোমাকে এভাবে ভালোবাসবো আর সারা জীবন এই ভাবেই তোমার পাশে থাকবো।
অন্তর্নিহিত অর্থ : নববধূ ও বর সারা জীবন একসঙ্গে থাকার ও একে অপরকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দেয়।
সপ্তম পাক
পাত্রকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : এবার আমরা স্বামী-স্ত্রী, আমরা এক। এই মুহূর্ত থেকে সারা জীবন তুমি আমার আর আমি তোমার। তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।
নব বধূকে প্রতিশ্রুতি নিতে হয় : ভগবান কে সাক্ষী রেখে এখন থেকে আমি তোমার স্ত্রী। আমরা চিরকাল একে অপরকে এভাবে ভালবাসব আর সম্মান করব। পবিত্রতাকে সর্বদা রক্ষা করব ও দায় দায়িত্ব পালন করব।
অন্তর্নিহিত অর্থ : নব দম্পতি ভগবানের আশীর্বাদ নিয়ে এক নতুন সম্পর্কের সূচনা করে।
No comments: